Sunday, January 9, 2011

বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো তৈরি করলেন উড়াল যান্ত্রিক প্রজাপতি

বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো তৈরি করলেন উড়াল যান্ত্রিক প্রজাপতি -ফিরোজ খান

মানুষ বর্তমানে প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞানী তথা প্রযুক্তিবিদরা এখন এমন কৃত্রিম বা যান্ত্রিক জিনিস তৈরি বা আবিষ্কার করছেন যা অনেক সময় প্রাকৃতিক বলেই মনে হয় মানুষের কাছে। বিজ্ঞানীরা এবার প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করলেন যান্ত্রিক প্রজাপতি, যা জীবন্ত প্রজাপতির মতোই উড়তে পারে। জানা গেছে, এটি তৈরি করেছেন হার্ভার্ড ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
যান্ত্রিক বা কৃত্রিম এ প্রজাপতি তৈরি করা হয়েছে ‘সোয়ালোটেইল' প্রজাপতির অনুকরণে। এর শক্তির উৎস একটি মাত্র ইলাস্টিক ব্যান্ড। এ ইলাস্টিক ব্যান্ড থেকে শক্তি নিয়ে জীবন্ত প্রজাপতির মতো ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোরোবোটিক্স বিজ্ঞানী হিরোটো তানাকা বলেন, আমাদের জানা মতে পৃথিবীতে এটিই প্রথম মুক্তভাবে উড়তে সক্ষম যান্ত্রিক প্রজাপতি। উড়তে থাকলে অনেকেই এটিকে আসল বা জীবন্ত প্রজাপতি মনে করেন। অর্থাৎ এটি এমনই নিখুঁত ও আধুনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরি করতে এক সঙ্গে কাজ করেছেন হিরোটো তানাকা ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসাও শিমুয়ানা। তানাকা আরও বলেন, আমরা এ যান্ত্রিক প্রজাপতিটিকে একটি আসল প্রজাপতির মতো ওড়ার ক্ষমতা দিতে সক্ষম হয়েছি। এটির ডানা ঝাপটানোর গতি, ওড়ার ধরন, ডানার আকৃতি ইত্যাদি একটি আসল সোয়ালোটেইল প্রজাপতির মতো। গবেষকরা জানিয়েছেন, এ যান্ত্রিক প্রজাপতিটি তৈরির মূল লক্ষ্য হলো একটি আসল বা জীবন্ত প্রজাপতির উড়বার পদ্ধতিটি আরও বেশি বা ভালোভাবে বুঝতে পারা। এ প্রজাপতিটি তৈরির সময় তারা বুঝতে পারেন যে, যান্ত্রিক প্রজাপতিটির ডানায় আসল প্রজাপতির ন্যায় যান্ত্রিক ধমনী স্থাপন করায় এটির ওড়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটিকে কিভাবে আরও আধুনিক করা যায় সেই বিষয় নিয়েও তারা ভাবছেন। শিশুদের কাছে এটি বেশ মজার খবর।

Source: Daily Sangram.

Friday, January 7, 2011

প্রজাপতির দেশে

Wednesday, January 5, 2011

প্রজাপতির রং

প্রজাপতির রং মৃত্যুঞ্জয় রায় এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রজাপতি যেন উড়ন্ত ফুল। বাহারি সব ফুলের মতোই ওদের রং-বেরঙের পাখা। রঙিন পাখা মেলে ওরা হাওয়ায় ভাসতে থাকে, ফুলে বসে। প্রজাপতিরা এমন রঙিন পাখা কোথায় পেল বলো তো? ওদের পাখা এ যুগে শুধু তোমাদেরই মুগ্ধ করে না, আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগেও মিসরের লোকদের মুগ্ধ করত। তাই তো তাদের আদি হরফের আঁকিবুঁকিতে সেই প্রাচীন যুগেও তারা প্রজাপতির ছবি আঁকত, সংকেত হিসেবে প্রজাপতি দিয়েই তারা বুঝে নিত অনেক কিছু। সেকালে প্রজাপতির ওই রঙিন পাখার রহস্য তারা বুঝত না। এ যুগের বিজ্ঞানীরা কিন্তু ঠিকই সে রহস্য খুঁজে পেয়েছেন, বের করেছেন প্রজাপতির রংরহস্য।
গোঁফ দেখে যেমন শিকারি বিড়াল চেনা যায়, তেমনি রং দিয়েই চেনা যায় প্রজাপতি। একেক প্রজাপতির একেক রং। রং মানে পাখায় পাখায় নানা রঙের নকশা। এক জাতের সঙ্গে অন্য জাতের প্রজাপতির রং ও নকশা কখনোই মেলে না, এমনকি একই প্রজাপতির পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতির রঙের মধ্যেও কিছুটা পার্থক্য থাকে। তা না হলে তো স্ত্রী ও পুরুষ চেনাই মুশকিল হয়ে যেত।
তবে প্রজাপতিদের রঙের দরকার আছে। প্রজাপতিদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় ওই রং দিয়েই। রং দিয়েই একই প্রজাতির প্রজাপতিরা একে অপরকে চিনতে পারে। এমনকি কোনো কোনো প্রজাপতি রং দিয়েই শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে। কিন্তু প্রজাপতিদের পাখার দুই পাশে কি একই রং? কখনো কোনো প্রজাপতি ধরে সেটা খেয়াল করে দেখেছ? যদি খেয়াল করো, দেখবে পাখার ওপরের পাখা ও নিচের পাশ কখনো একই রঙের হয় না। ওপরের পাশ হয় চকচকে এবং নিচের পাশ হয় ধূসর বা মলিন।
সব প্রজাপতিরই চারটি পাখা থাকে; কিন্তু তোমরা অনেকেই ছবি আঁকার সময় আঁকো দুটি পাখা। না না, তোমাদের একটুও দোষ নেই_দোষ তো ওই প্রজাপতিগুলোর। ওরা তো ওদের পেছনের পাতলা পাখা জোড়া সামনেরগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে রাখে। রঙিন পাখা জোড়ায় তালি বাজিয়ে ওরা মনের আনন্দে উড়ে উড়ে সূর্য আর ফুলের সঙ্গে মিতালি গড়ে খেলা করে। ফুল থেকে ওরা মধু খায়, পানি খায় আর রোদ থেকে পায় চলার প্রেরণা ও সৌন্দর্য।
মাছের গায়ে যেমন আঁশ থাকে, প্রজাপতির পাখায়ও অমন শত-সহস্র আঁশ থাকে। তবে সেগুলো মাছের মতো শক্ত আর বড় নয়, রেশমের মতো কোমল আর ক্ষুদ্র। খালি চোখে সেসব আঁশের আকার-আকৃতি সহজে বোঝা যায় না। ইংরেজিতে এসব আঁশকে বলে স্কেল। প্রজাপতির রংরহস্যের মূলে রয়েছে এসব ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র আঁশ। এসব আঁশ মেলানিন নামে এক ধরনের পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ দ্বারা রঞ্জিত থাকায় তা পাখায় কালো ও বাদামি রং সৃষ্টি করে। কিন্তু লাল, নীল, সবুজ, হলুদ_এসব রং আসে কোথা থেকে? এগুলো কিন্তু কোনো পিগমেন্ট দিয়ে হয় না। আঁশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশই এসব রঙের সৃষ্টি করে থাকে। আঁশের মধ্যে এক ধরনের আলোক স্ফটিক বা ফোটোনিক ক্রিস্টাল প্রকৃতি আছে। তাই সূর্যের আলো আঁশে পড়ামাত্রই আঁশের মাইক্রোস্ট্রাকচারাল প্যাটার্নের অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে আলোকরশ্মির এক বর্ণিল বিচ্ছুরণ ঘটে। আর তার প্রভাবেই আমরা নানা প্রজাপতিকে দেখি নানা রঙে। এসব আঁশ এতো সূক্ষ্ম, হালকা ও আলগা যে তুমি প্রজাপতির পাখায় আঙুল ছোঁয়ালেই সেগুলো গুঁড়োর মতো তোমার আঙুলে লেগে যাবে। আর তাতে নষ্ট হয়ে যাবে প্রজাপতির রং ও সৌন্দর্য। হয়তো ওকে আর চেনাই যাবে না।
Source: Daily Kalerkantho

জীবন্ত শুকনো পাতার কথা

অপকারী নাকি পরোপকারী?

প্রজাপতি, ও প্রজাপতি

প্রজাপতি, ও প্রজাপতি প্রজাপতি কে না চেনে? কে না ভালোবাসে? ফুলে ফুলে যখন ঘুরে বেড়ায় তখন কী দারুণ লাগে! তবে প্রজাপতি কিন্তু এমনি এমনি ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় না। মধুর লোভে। প্রজাপতিও ফুল থেকে মধু পান করে। আর প্রজাপতি কিন্তু যখন-তখন দেখা পাওয়া যায় না। ঠাণ্ডায় প্রজাপতিরা উড়তেই পারে না। প্রজাপতির শরীরের তাপমাত্রা ৮৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপর হলেই শুধু ওরা উড়তে পারে। এ জন্যই শীতের সময় এবং ঠাণ্ডার দিনে এদের দেখা পাওয়া যায় না।
বসন্তের শেষেই প্রজাপতির ডিম ফুটে ছানা বেরোয়। প্রজাপতির ছানাদের দেখে আবার ভয় পেয়ো না যেন, কারণ ওরা দেখতে তো আর প্রজাপতির মতো নয়! তেখতে অদ্ভুত এই ছানারাই একদিন বড় হয়ে সুন্দর প্রজাপতি হয়।
Source: Daily Kalerkantho

সপ্ত আশ্চর্য প্রজাপতি

সপ্ত আশ্চর্য প্রজাপতিঅবাক করা কিছু প্রজাপতিও আছে দুনিয়ায়। তেমনি সাতটা অবাক করা প্রজাপতির কথা। গ্লাসউইং বাটারফ্লাইগ্লাসউইং বাটারফ্লাই মানে কাচপাখার প্রজাপতি। তো নামেই যখন কাচপাখা এদের ডানা তো স্বচ্ছ হবেই। এদের শিরার কোষগুলো কাচের মতো স্বচ্ছ। এদের বিচরণ মধ্য আমেরিকা থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত।নেগলেক্টেড এইটি-এইট বাটারফ্লাইনেগলেক্টেড এইটি-এইট বাটারফ্লাই মানে অবহেলিত ৮৮ প্রজাপতি। প্রজাপতিটাকে দেখো। এরপাখায় ইংরেজি এইটি-এইট আর বাংলায় ৪৪ দেখতে পাচ্ছ? ব্রাজিলের এই প্রজাপতিদের এ জন্যই এমন নাম।জায়ান্ট আউল বাটারফ্লাইআউল বাটারফ্লাই বা পেঁচা প্রজাপতি হিসেবেই এরা বিখ্যাত। আকারে একটু বড়রা দানব হিসেবে পরিচিত। এদের পাখার দিকে তাকিয়ে দেখো_মনে হচ্ছে না কোনো পেঁচা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে? প্রায় ২০ প্রজাতির পেঁচা প্রজাপতির সন্ধান মিলেছে। মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিবহুল বনাঞ্চলে এদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।এমারল্ড সোয়ালোটেইল বাটারফ্লাইগাঢ় সবুজ রঙের এই প্রজাপতির ডানার নিচে দুটো লেজ আছে, যেন লেজের ডগায় দুটো পান্না ঝুলে আছে। সে জন্যই এমন নাম। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় এদের দেখা মেলে। এদের কিছু উপপ্রজাতির দেখা পাওয়া গেছে মিয়ানমার, বোর্নিও, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে।জেব্রা লংউইং বাটারফ্লাইজেব্রার মতো ডোরাকাটা এই প্রজাপতিদের ডানায়। তবে সাদা-কালো নয়, হলুদ-কালো। আমেরিকার ফ্লোরিডায় এদের সন্ধান পাওয়া গেছে।হোয়াইট মরফো প্রজাপতিসাদা মরফো প্রজাপতিরা ঘোরাফেরা করে মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বীপগুলোতে। এদের ওপরের ও নিচের_সব অংশের পাখাই ধবধবে সাদা। তবে অল্প কিছু জায়গায় বাদামি দাগ আছে।পিকক পানসি বাটারফ্লাইএই প্রজাপতিদের দেখলে মনে হয় কোনো ময়ূর ডানা মেলেছে। এ জন্যই এমন নাম। এদের খোঁজ মিলেছে ভারতে।
Source: Daily Kalerkantho

প্রজাপতির অবাক করা ব্যাপারস্যাপার

Tuesday, January 4, 2011

প্রজাপতির ডানায় যখন জিপিএস

প্রজাপতির ডানায় যখন জিপিএস

মোঃ হাবিবুর রহমান, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৯,

স্যাটেলাইটনির্ভর জিপিএস বা গ্লোবাল পজিসনিং সিস্টেম ব্যবহার করে আজকাল ড্রাইভিং থেকে শুরু করে সমুদ্র নেভিগেশন, আবহাওয়ার অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রভৃতি আধুনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে নিখুঁতভাবে। পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। প্রকৃতিতেও এই ধরনের জিপিএস সিস্টেম ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। উত্তর আমেরিকার মনার্ক প্রজাপতি প্রকৃতির এক বিস্ময়।
নির্দিষ্ট হেমন্ত মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ প্রজাপতি দল বেঁধে দক্ষিণাঞ্চলে পাড়ি জমায়। দীর্ঘ চার হাজার কিলোমিটার পথ নিখুঁতভাবে পাড়ি দিয়ে ওরা পৌঁছে মেক্সিকোতে। সাধারণ এক পতঙ্গের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমার রহস্য ভেদ হয়নি এতদিন। বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, প্রজাপতি মস্তিষ্কের জৈব ঘড়ির সাহায্যে সূর্যের অবস্থান নির্ণয় করে তাদের নির্দিষ্ট পথ চিনে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় মনার্ক প্রজাপতির পথ চলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রতি বছর হেমন্তে মনার্ক প্রজাপতিরা তাদের শুঁড়ে অবস্থিত ঘড়ি আর সূর্যের অবস্থান মিলিয়ে অসাধারণ এক জিপিএস সিস্টেমে তাদের দীর্ঘ পথ চিনে নেয়।
Source: Daily Amardesh

টিএসসিতে রঙিন ডানার ওড়াউড়ি

টিএসসিতে রঙিন ডানার ওড়াউড়ি

স্টাফ রিপোর্টার, ২৩ এপ্রিল ২০১০
প্রজাপতি মানেই লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, বেগুনি ইত্যাদি বহুবর্ণের ছটা— যার সৌন্দর্য শিল্পীর সৃষ্টিকেও হার মানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে এখন চলছে নানা বর্ণের প্রজাপ্রতির ওড়াউড়ি। চত্বরে গেস্টরুমের সামনে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য জীবন্ত প্রজাপতি। আর রুমের মধ্যে রয়েছে ৭ গোত্রের ১৮০ প্রজাতির প্রজাপতির আলোকচিত্র। দুয়ে মিলে প্রজাপ্রতির রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে টিএসসি চত্বর। এসব প্রজাপতির সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি করছে দুর্নিবার কৌতূহল আর নির্মল আনন্দ। ইবিবিএল এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন যৌথ উদ্যোগে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। আমাদের দেশে এ ধরনের আয়োজন এটাই প্রথম। গতকাল বিকালে পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে এ প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, প্রোভিসি অধ্যাপক হারুন অর রশীদ প্রমুখ। তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ বাশারের তত্ত্বাবধানে প্রায় ২০ জন গবেষক ১৯৯৯ সাল থেকে দীর্ঘ ১১ বছর নিরলস পরিশ্রম করে দেশের প্রত্যন্ত বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির অসংখ্য আলোকচিত্র। তাদের সংগৃহীত সেসব আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীতে রয়েছে বার্ড উইং, নিমফালিড, লাইসানিড, প্যাপিলিওনিড, সেটাইরিড, হেসাপিরিড ইত্যাদি প্রজাতির প্রজাপতি। এর মধ্যে বার্ড উইয়ং বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাতির প্রজাপতি, যার অস্তিত আমাদের দেশেও রয়েছে।
আমাদের দেশে রয়েছে প্রায় দুইশ’ প্রজাতির প্রজাপতি । প্রকৃতির দৃষ্টিনন্দন প্রাণী এই প্রজাপতি সৌন্দর্য এবং বর্ণিল রঙের বাহারে মানুষকে মুগ্ধ করে। এছাড়াও পরিবেশের জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখা ও প্রাকৃতিক জৈব সম্পদ সংরক্ষণে এই প্রজাপতির গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ শুধু কাব্য ছাড়া এই সুন্দর প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। প্রজাপতির জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে ভীষণভাবে কমে আসছে এর সংখ্যা— সংকুচিত হচ্ছে বিচরণ ক্ষেত্র। পৃথিবীর অনেক দেশেই বর্তমান সময়ে প্রজাপতির পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সেসব পার্কে প্রজাপতির জীবনযাত্রার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে জীবন্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে অসংখ্য প্রজাতির প্রজাপতি; যা দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় জমায় দেশ-বিদেশের হাজার হাজার দর্শনার্থী।
ভবা পাগলার সঙ্গীত সম্মেলন : গানই মোর সর্বশ্রেষ্ঠ সাধন- নিজের জীবনের অর্থ বলতে গিয়ে নিজের লেখা গানের মতো করেই বলেছিলেন বিশিষ্ট সাধক, কবি ও সঙ্গীত সাধক ভবা পাগলা।
সেই মহান সাধকের স্মৃতি স্মরণ করতেই বাংলাদেশ ভবা পাগলা স্মৃতি সংসদ আয়োজন করে ভবা পাগলা সঙ্গীত সম্মেলন। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মূল মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। বাংলাদেশ ভবা পাগলা স্মৃতি সংসদের সভাপতি আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভবা পাগলার জন্মস্থান মানিকগঞ্জের সংসদ সদস্য এসএম আবদুল মান্নান, ভবা পাগলার ভক্ত ও গবেষক আচার্য গোপাল ক্ষিত্রি, কাংসধর তরফদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভবা পাগলার জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা করেন তার ভক্ত ও গবেষকরা। আলোচনায় প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী। আলোচকরা বলেন, ভবা সারাজীবন গান নিয়েই বেঁচে ছিলেন। তিনি তার কথাও গানে গানে বলতেন।
আলোচনা শেষে ভবা পাগলার লেখা ও সুরারোপিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, বিপুল ভট্টাচার্য, পান্না বিশ্বাস, বাবুল সূত্রধর, বিমান বিশ্বাস, হালিমা পারভীন প্রমুখ।
Source: Daily Amardesh

প্রজাপতির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রজাপতির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার, ১৮ অক্টোবর ২০১০
গাছপালায় ঘেরা দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে আগামী মাসের শেষদিকে ‘প্রজাপতি মেলা’ আয়োজন করা হবে। পরাগায়ন-সহায়ক এ দৃষ্টিনন্দন প্রজাতির বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘প্রজাপতি ঘর’ তৈরির মাধ্যমে পতঙ্গটির বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রকৃতির অলঙ্কার হিসেবে পরিচিত প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। পরাগায়নে যাতে সমস্যা না হয়, সেই লক্ষ্যে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাদে ও এর সামনের বাগানে পরিকল্পিভাবে তৈরি করা হয়েছে ‘প্রজাপতি ঘর’। এখানে কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে অবমুক্ত করা হচ্ছে প্রজাপতি। তাই সবুজ নিসর্গে ভরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানগুলোতে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতির দুরন্ত ওড়াউড়ি চোখে পড়ে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগেরই সহযোগী অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন ১৪ বছর ধরে নিরলসভাবে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করছেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম এ গবেষণার কাজ শুরু হয় বলে জানান তিনি। প্রজাপতির একটি খামার গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে তার।
অধ্যাপক মনোয়ার বলেন, বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার অধীনে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্লেইন টাইগার প্রজাতির প্রায় তিনশ’ প্রজাপতি সম্প্রতি ক্যাম্পাসে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি এক তথ্যে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে ও তার একক গবেষণায় এ পর্যন্ত প্রজাপতির মোট ১০২টি প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে।
অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রজাপতির প্রায় ২০০টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্লেইন টাইগার, কমন ক্রো, প্লাম জুডি, ডিঙ্গি বুশব্রাউন, কমন ডাফার, এপফ্লাই, পি ব্লু, টাইনি গ্রাস ব্লু, ওক ব্লু, কমন সেইলর, কমন রোজ, ব্লু মরমন, স্ট্রাইপড অ্যালবাট্রস, মটিলড ইমিগ্রান্ট, কমন গ্রাস ইয়েলো, স্ট্রাইপড পাইরট, মানকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি।
তিনি জানান, এসবের মধ্যে স্ট্রাইপড পাইরট, মানকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি নামের চারটি প্রজাতি অতিসম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে জাবি ক্যাম্পাসে প্রজাপতির নতুন নতুন প্রজাতির সন্ধান মিললেও দেশে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় প্রকৃতির অপরূপ অলঙ্কার এই প্রজাপতিকুলের অস্তিত্বও এখন হুমকির মুখে।
বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী দিনগুলোতে প্রজাপতির একটি খামার গড়ে তোলার আশাবাদ জানিয়ে এই গবেষক বলেন, প্রজাপতির প্রধান কাজ পরাগায়নে সহায়তা করা। এর মাধ্যমেই উদ্ভিদ বংশবিস্তারে সক্ষম হয়।
প্রজাপতি সংরক্ষণে এখনই উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রজাপতির সবক’টি প্রজাতির তালিকা তৈরির পাশাপাশি এদের সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
প্রজাপতির নান্দনিক ও বাণিজ্যিক ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রজাপতি আমদানি ও রফতানি করে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা সম্ভব। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড প্রজাপতি রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণার পর জানিয়েছেন, সোলার প্ল্যান্টে প্রজাপতির পাখার স্কেল ব্যবহার করে দশ গুণ বেশি সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশও এ প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘প্রজাপতি মেলা’ করা হবে বলেও জানান অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন।
প্রজাপতি প্রতিপালন ও এর নিরাপদ বংশবৃদ্ধির জন্য প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দুটি ‘প্রজাপতি ঘর’ তৈরির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কৃত্রিম উপায়ে প্রজাপতির খাবারসহ (পর্যাপ্ত ফুল ও গাছ) অনুকূল পরিবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান, এখানে প্রজাপতির কৃত্রিম উপায়ে বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে পূর্ণাঙ্গতা প্রাপ্তির পর উন্মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে প্রজাপতিকুল রক্ষায় সামান্য হলেও অবদান রাখা হচ্ছে।
Source: Daily Amardesh

প্রেসক্লাবে রঙিন প্রজাপতির ওড়াউড়ি

প্রেসক্লাবে রঙিন প্রজাপতির ওড়াউড়ি

জিয়াউদ্দিন সাইমুম, ২২ নভেম্বর ২০১০
নিত্যদিনের নাগরিক কোলাহলের ভিড়ে হঠাত্ রঙিন ডানার প্রজাপতির দুরন্ত ওড়াউড়ি দেখলে সবার মন জুড়ায়। আর হেমন্তের এই মিঠে-কড়া দিনে রাজধানীর ব্যস্ততম তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সবুজ চত্বরে এখন প্রকৃতির এই অনবদ্য সৃষ্টির যেন বাহারি মেলা বসেছে। সাংবাদিকদের ‘সেকেন্ড হোম’ নামে পরিচিত এই ক্লাবের বাগানের ফুলে ফুলে নানা রংয়ের প্রজাপতির ভিড় এটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, শীতের শুরুতে দিবাচর এই প্রাণীটির প্রজননের সময় এসে গেছে। প্রকৃতির অলঙ্কার এই ক্ষুদে পতঙ্গটির রঙিন ডানা মানুষকে যুগে যুগে কাছে টেনেছে। এটির বাহারি উড়ে চলা দেখে কবি চার্লস ডিকেন্স বড় আফসোস করে বলেছিলেন, ‘আমি স্বাধীন হতে চাই। আর প্রজাপতি জন্ম থেকেই স্বাধীন।’ অথচ খুব বেশি দিন বাঁচে না এ পতঙ্গ। প্রজাতিভেদে এর আয়ু পাঁচদিন থেকে ১০ মাস। দুটি অ্যান্টেনা, দুটি জটিল চোখ আর একটি নলাকার মুখ নিয়েই এদের অনিশ্চিত পথচলা।
বাংলাপিডিয়া মতে, আমাদের দেশে ১২৪ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত হয়েছে। এরা ঘণ্টায় ১২ মাইল থেকে ২৫ মাইল বেগে উড়তে পারে। বেশি শীতে এরা টিকতে পারে না বলে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে প্রজাপতি নেই। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রজাপতি ঘুমায় না। বিশ্রাম নেয় মাত্র। এরা কিছু পাখির মতো পরিযায়ীও বটে।
তবে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন দাবি করেছেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রজাপতির প্রায় ২০০টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্লেইন টাইগার, কমন ক্রো, প্লাম জুডি, ডিঙ্গি বুশব্রাউন, কমন ডাফার, এপফ্লাই, পি ব্লু, টাইনি গ্রাস ব্লু, ওক ব্লু, কমন সেইলর, কমন রোজ, ব্লু মরমন, স্ট্রাইপড অ্যালব্যাট্রস, মটিলড ইমিগ্রান্ট, কমন গ্রাস ইয়েলো, স্ট্রাইপড পাইরট, মাংকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি।
তিনি জানান, এসবের মধ্যে স্ট্রাইপড পাইরট, মাংকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি নামের চারটি প্রজাতি অতি সম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে।
দিবাচর এ পতঙ্গটি সাধারণত মধু খেয়ে বাঁচে। তবে খাদ্য তালিকায় রয়েছে ফুলের রেণু, গাছের রস, পচা ফল, গোবর, পচনশীল মাংস, বালু অথবা ময়লায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা খনিজ পদার্থ। পরিবেশ রক্ষায় এ পতঙ্গটির অবদান রয়েছে। এরা ফুলের পরাগায়ণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে প্রজাপতির আলোক সংবেদী রঙিন পাখা নিয়েই প্রকৃতিপ্রেমীরা মেতে থাকেন।
সম্ভবত এ কারণে বলা হয়ে থাকে প্রজাপতি মানেই লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, বেগুনিসহ বহু বর্ণের নয়নাভিরাম ছটা— যার সৌন্দর্য শিল্পীর সৃষ্টিকেও নাকি হার মানায়। আর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে মানবিক এ অনুভূতিটি এখন নতুন গতি পাচ্ছে।
এটা ঠিক যে, প্রকৃতির দৃষ্টিনন্দন প্রাণী প্রজাপতির সৌন্দর্য আর পাখার বর্ণিল রংয়ের বাহার মানুষকে মুগ্ধ করা ছাড়াও পরিবেশের জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য রাখতে সহায়তা দেয়। আবার প্রাকৃতিক জৈবসম্পদ সংরক্ষণেও এটির গুরুত্ব রয়েছে। অথচ এই সুন্দর প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে এর সংখ্যা, বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় সংকুচিত হচ্ছে এর বিচরণ ক্ষেত্র।
পৃথিবীর অনেক দেশেই বর্তমানে প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সেসব পার্কে প্রজাপতির জীবনযাত্রার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে জীবন্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে অসংখ্য প্রজাতির প্রজাপতি। জাতীয় প্রেস ক্লাব এ জাতীয় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ না নিলেও নাগরিক যন্ত্রণার ভিড়ে ক্লাবটির সবুজ চত্বরে প্রজাপতির দুরন্ত ওড়াউড়ি কলমজীবীদের মনে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। নানা কারণে প্রেস ক্লাবে আসা দর্শনার্থীরাও প্রজাপতির বাহারি পাখা থেকে চোখ ফেরাতে পারছেন না।
প্রজাপতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব। পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ এখন রীতিমতো প্রজাপতি রফতানি করছে। তবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রঙিন পাখার নজরকাড়া ওড়াউড়ি এটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রজাপতি নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।
Source: Daily Amardesh

প্রজাপতির ডানা থেকে বিদ্যুত্

প্রজাপতির ডানা থেকে বিদ্যুত্

জিয়াউদ্দিন সাইমুম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
স্বপ্নে প্রজাপতির প্রসঙ্গ টেনে চীনের মাওবাদী দার্শনিক চুয়াং জু বিশ্বে এক জটিল প্যারাডক্সের জন্ম দিয়ে গেছেন। স্বপ্নে তিনি একটি প্রজাপতি দেখেন, যার মাঝে নেই ব্যক্তি চুয়াং জু’র অস্তিত্বের অনুভূতি। তিনি জেগেই প্রশ্ন করলেন, ‘আমি কি সেই চুয়াং জু, যিনি প্রজাপতি হবার স্বপ্ন দেখার আগে চুয়াং জু ছিলাম নাকি এখন আমি সেই প্রজাপতি, যে প্রজাপতি চুয়াং জু হবার স্বপ্ন দেখছে?’
সেই প্রজাপতি এখন চীনা বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে। কারণ, পতঙ্গটির ডানার নিচে সোলার কালেক্টরের অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা আগেই পেয়েছেন। আর সম্প্রতি চীনা বিজ্ঞানীরা প্রজাপতির পাখার বর্ণিল আলোকচ্ছটা আর ফিনফিনে ডানার গাঠনিক কাঠামো গবেষণার পর বলছেন, আগামী দিনগুলোতে প্রজাপতির ডানার এ অনন্য যান্ত্রিক কৌশল অতি সস্তা ও অধিকতর কার্যকর সোলার সেল উদ্ভাবনে সহায়তা দেবে।
ফটোভল্টিয়াক ইফেক্টকে কাজে লাগিয়ে সোলার সেলের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রজাপতির ডানার তাপমাত্রা, গাঠনিক কৌশল, লাইট কালেক্টর নিয়ে গবেষণার পর চীনা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, টিটানিয়াম ডাইঅক্সাইড ছড়ানো আলোক সংবেদী সোলার সেল ফটোয়ানেড নামে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্ম দেয়, যা আলোক রশ্মি থেকে সহজেই ফোটন শুষে নিয়ে সেল থেকে ইলেকট্রন ত্যাগে সহায়তা করে। (সূত্র : নিউসায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন)।
চীনা গবেষকরা প্রজাপতির ডানাকে টিটানিয়াম মেশানো দ্রবণে মেশান। এরপর তারা প্রজাপতির পাখা থেকে টিটানিয়াম ডাইঅক্সাইডের একটি অবশেষ বা তলানি বের করে আনেন। এ তলানির সাহায্যে তারা ফটোয়ানেড তৈরি এবং তা সোলার সেলে ব্যবহারের পর দেখতে পান, সেলের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ১০ গুণ বেড়ে গেছে।
সাংহাই জিয়াও তঙ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ডাই ঝাং সোলার সেলের কার্যকারিতা বাড়ানোর কৌশল সম্পর্কে বলেন, ‘প্যারিস পিকক’ নামের প্রজাপতির আলো-শোষক ডানার বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রযৌক্তিক প্রক্রিয়ায় কাজে লাগানো গেলে অতিসস্তায় অথচ অধিকতর কার্যকর পন্থায় সোলার সেল উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা যায়, চীনাদের পাশাপাশি জাপানি বিজ্ঞানীরাও একই প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছেন। তাদের এ গবেষণার জাগতিক সাফল্য অধিকতর বাস্তব হয়ে গেলে বিশ্বে সোলার সেলের প্রসার যেমন বেড়ে যাবে, তেমনি বিশ্বে বিদ্যুত্ সমস্যার একটা সমাধান পাওয়া যাবে বলে গবেষকরা আশা করছেন।
বর্তমানে সৌরবিদ্যুত্ প্ল্যান্টগুলোতে আলোকসংবেদী রং ব্যবহৃত হয়। মাইকেল গ্রাটজেলের নামানুসারে এসব সেল ‘গ্রাটজেল সেল’ নামেও পরিচিত। ল্যাবরেটরি টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে, সোলার সেলে ব্যবহৃত আলোকসংবেদী রং-এর চেয়ে প্রজাপতির ডানার সোলার কালেক্টর অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে আলো শুষে নিতে পারে।
চীনা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রজাপতির ডানায় থাকা সোলার কালেক্টর বানানো খুব জটিল নয়। আর এ কাজে সফলতা এলে সোলার সেলের বাণিজ্যিক ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যাবে।
একই গবেষণার ফল নিয়ে ‘ক্যামেস্ট্রি অব ম্যাটেরিয়ালস’ নামের অন্য একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে চীনা গবষেকদের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখা হয়েছে—‘প্রজাপতির পাখার গাঠনিক কাঠামো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এমন একটি কার্যকর ফটোয়ানোড উদ্ভাবন করেছি, যা সোলার সেলে প্রথাগত আলোক সংবেদী রঙের পরিবর্তে ব্যবহার করা যাবে।’
বলা যায়, বর্ণিল ডানা ছড়িয়ে মনের আনন্দে বাতাসে ভেসে চলা অথবা ফুলের কোমল পাপড়িতে মোহনীয় ভঙ্গিতে বসে থাকা প্রজাপতি আগামীতে সবার নজর কাড়বে আরও বেশি করে। কারণ, এ পতঙ্গ শুধু অধিকতর কার্যকর সোলার সেল উদ্ভাবনেই সহায়তা দেবে না, এটা জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারবে।
হাতেগোনা কয়েক প্রজাতির প্রজাপতি ফসলের ক্ষতি করলেও ২৪ হাজার প্রজাতির বাকিগুলো নির্দোষ। ভিজুয়াল আর্ট ও শিল্পকর্মে ‘উড়ন্ত ফুল’ নামে পরিচিত এ পতঙ্গটি এ কারণে বেশ জীবন্ত। সাড়ে তিন হাজার বছর আগে মিসরের হায়ারোগ্লিফিক স্ক্রিপ্টে প্রজাপতির অঙ্কন দেখে এটা বোঝা যায়, এ পতঙ্গটি সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে এটা শিল্পকলা ও অলঙ্কারের ডিজাইন তৈরির জনপ্রিয় মটিফ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এয়ারক্রাফট ও ঘুড়ি তৈরির ডিজাইন নির্মাণে বিজ্ঞানীরা এখন প্রজাপতির পাখার যান্ত্রিক কৌশল নিয়ে বেশ গবেষণায় মেতেছেন। ন্যানোপ্রযুক্তিবিদদের কাছেও এটার বাহারি পাখা গবেষণার বিষয়।
প্রজাপতির বাহারি উড়ে চলা দেখে চার্লস ডিকেন্স বড় আফসোস করে বলেছিলেন, ‘আমি স্বাধীন হতে চাই। আর প্রজাপতি জন্ম থেকেই স্বাধীন।’ অথচ খুব বেশি দিন বাঁচে না প্রজাপতি। প্রজাতিভেদে এটার আয়ু ৫ দিন থেকে ১০ মাস। দুটো এন্টেনা, দুটি জটিল চোখ আর একটি সুরযুক্ত মুখ নিয়েই এদের অনিশ্চিত পথচলা। বাংলাপিডিয়া মতে, আমাদের দেশে ১২৪ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত হয়েছে। এটা ঘণ্টায় ১২ মাইল থেকে ২৫ মাইল বেগে উড়তে পারে। বেশি শীতে এরা টিকতে পারে না বলে এন্টার্কটিকা মহাদেশে প্রজাপতি নেই। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এরা ঘুমায় না। বিশ্রাম নেয় মাত্র। এটা কিছু পাখির মতো পরিযায়ী।
দিবাচর এ পতঙ্গটি সাধারণত মধু খেয়ে বাঁচে। তবে এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ফুলের রেণু, গাছের রস, পচা ফল, গোবর, পচনশীল মাংস, বালি অথবা ময়লায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা খনিজ পদার্থ। পরিবেশ রক্ষায় এ পতঙ্গটির অবদান রয়েছে। এটা ফুলের পরাগায়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে প্রজাপতির আলোক সংবেদী রঙিন পাখা নিয়েই বিজ্ঞানীরা মেতে আছেন।
Source: Daily Amardesh

প্রজাপতি ডলার আনে

প্রজাপতি ডলার আনে
আলতাফ হোসেন লাভলু

প্রজাপতি পাখায় পাখায় এ কোন মায়ার রং ছড়ায়। বোধ করি কবিরা ফল ও পাখির পরই প্রজাপতিকে নিয়ে বেশি চর্চা করেছেন। অবশ্য প্রজাপতির সৌন্দর্যই এর মূল কারণ। এ উপমহাদেশে প্রজাপতির আধিক্য রয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। বিশেষ করে প্রাকৃতিক কারণে নেপালে পোকামাকড় সেই সঙ্গে প্রজাপতিরও জন্মের হার বেশি। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে এ সুন্দর দেশটিতে মোট ৬০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। কাঠমু-ুর বিভিন্ন উপত্যকায় উড়ে বেড়ানো হাজার হাজার প্রজাপতিই বিশ্বের পর্যটকদের টেনে আনে এখানে। গোদাবরী, ফুলচকী ও নার্গাজন উপত্যকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেই সঙ্গে চিকচিকে রোদেলা বিকেলে রঙবেরঙের প্রজাপতি এ দেশটিকে বছরে প্রচুর পরিমাণে ডলার অর্জনের সুযোগ করে দেয়। তবে দুঃখের বিষয় এসব নিরীহ সুন্দর প্রাণীরাও শিকারি মানুষের পাল্লায় পড়ে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও এদেশে ব্যবসায়িকভাবে প্রজাপতি ধরা নিষিদ্ধ। প্রজাপতি কি খায়? আসলে প্রজাপতির জীবনে চারটি ভাগ। প্রথম হলো ডিম। দ্বিতীয় শুঁয়োপোকা। তৃতীয় গুটিপোকা। এই অবস্থায় সারা শীতকাল ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। চতুর্থ অবস্থা হলো সুন্দর প্রজাপতি। দ্বিতীয়ত শুয়োপোকা থাকা অবস্থায় যতটা পারে খেয়ে নেয়। অনেক প্রজাপতি আছে যারা শুধু এই একবারই খেয়ে থাকে শুঁয়োপোকা থাকা অবস্থায়। খেতে খেতে ফুলে ফেঁপে ওঠে। বাইরের চামড়াটা ফেটে গিয়ে নতুন প্রজাপতি বেরিয়ে পড়ে। এই ফাটার কাজ বার বার হতে পারে। ফলে ডিম্বাবস্থায় যে আকার থাকে, তার চেয়ে অনেকগুণ বড় হয়ে যায়। প্রজাপতির শরীরে তিনিটি প্রধান অংশ থাকে মাথা, বুক ও পেট, যেসব প্রজাপতি খালি খেয়েই খাকে, তাদের মুখের বদলে একটা পাইপ থাকে। যখন ব্যবহার হয় না তখন গাড়ির স্প্রিংয়ের মতো এই পাইপটা পাকানো থাকে। ফুলে মধু চুষে খাবার জন্য এই নলকে বেশ কিছুদূর পর্যন্ত পাঠিয়ে দিতে পারে। মথ জাতীয় প্রজাপতিদের পাইপ ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কারুর ওপর করাতের মতো পাইপ হয়। ফলটাকে ফেটে তার ভেতরে থেকে চুষে নেয়। এই পাইপটাকে বলা হয় অ্যানটেনা। এই অ্যানটেনার সাহায্যে প্রজাপতিরা তিনটা কাজ করে- অনুভব, গন্ধ শোকে, এবং শ্রবণ করে। পৃথিবীর নানা দেশে বর্ণালী ও বিচিত্র রঙের আকর্ষণীয় প্রজাপতি বাস করে। নানা প্রজাপতির এ প্রজাপতি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আকর্ষণীয়। তাই পর্যটকদের করে আকর্ষণ। জাপানির এক নাগরিক প্রজাপতি চুরি করতে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার অভয়ারণ্যে। প্রহরীর চোখ এড়িয়ে যখন ৩২টি প্রজাপতি নিয়ে পালাচ্ছিলেন তখন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়ে। আদালতে তাকে চালান দেওয়ার পর যতœপুর শহরের ম্যাজিস্ট্রেট অজ্ঞাতনামা ও জাপানিকে দু’সপ্তাহে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন। সন্ধান পাওয়া তথ্যমতে অসংখ্য প্রজাপতির মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির প্রজাপতির নাম ‘ট্রয়েডস ভিক্টোরিয়া’। এ প্রজাপতির পুরুষদের অতিকায় দু’ডানার মাপ ১২ ইঞ্চিরও বেশি। আর ওজন ৫ গ্রামেরও বেশি। এটি পাওয়া গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সলোমান দ্বীপপুঞ্জে।

মেক্সিকো: মনার্ক নামের প্রজাপতির আমেরিকার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রা

মেক্সিকো: মনার্ক নামের প্রজাপতির আমেরিকার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রা

দেশ : মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা
বিষয় : পরিবেশ, ভ্রমণ
লিখেছেন: Andrea Arzaba
অনুবাদ করেছেন : বিজয়


মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশ এবং কানাডায় এক বিচিত্র ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যার মধ্য দিয়ে কেউ এক একজন ভাবতে পারে যে প্রকৃতি কতটা বিস্ময়কর হতে পারে। এই অবিশ্বাস্য কাজটি করে মনার্ক (রাজকীয়) নামের এক প্রজাপতি। এই পতঙ্গটি একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে যাবার জন্য তিন থেকে চার প্রজন্ম অতিবাহিত করে।

মিরাপোসা মনারকা, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী গুস্তাভো (লু৭ফ্রার্ব), এবং এটি ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে।

মিরাপোসা মনারকা, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী গুস্তাভো (লু৭ফ্রার্ব), এবং এটি ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে।

সৌন্দর্যের বাইরেও মনার্ক প্রজাপতি তার প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং লম্বা সময় টিকে থাকার কারণে বিখ্যাত। যেখানে অন্য অনেক প্রজাপতির গড় আয়ু ২৪ দিন, সেখানে মনার্ক প্রজাপতি ৯ মাস পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। এর মানে তারা সাধারণ প্রজাপতির চেয়ে ১২ গুণ বেশি আয়ুর অধিকারী।

প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষে লক্ষ লক্ষ মনার্ক প্রজাপতি মেক্সিকোর মিকাওকান বনে এসে হাজির হয়। তবে এর জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রে ও কানাডার উত্তরাংশ থেকে প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার পাড়ি দেয়। বনের ভেতরে আসা হাজার হাজার প্রজাপতিকে দেখতে এখানকার বাসিন্দা এবং পর্যটকরাও এখানে এসে হাজির হয়। এই এলাকাটি সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।

এটি এক অসাধারণ যাত্রা, ভীষণ ক্লান্তিকর, কিন্তু যখন আপনি চূড়ায় উঠবেন এবং দেখবেন লক্ষ লক্ষ প্রজাপতি আপনার চারপাশে উড়ছে, তখন ব্যাপারটি ঠিক বর্ণনা করতে পারবেন না। শিশুরা তখন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ে, এবং প্রাপ্ত বয়স্করা তখন নতুন করে বিস্মিত হবার ক্ষমতা অর্জন করে, প্রকৃতি যে জ্ঞানী এতে কোন সন্দেহ নেই।

অনেক প্রাচীন সময় থেকে এই ঘটনা ঘটে আসছে। এই প্রজাপতি সেই সময়ে মানুষদের মনেও যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল তারও স্বাক্ষ্য রয়েছে। এমনকি মেক্সিকোর প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা, ভাস্কর্য এবং ছবিতে মনার্ক প্রজাপতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তবে বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে বন উজাড় করে ফেলা এবং ভয়াবহ পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে প্রজাপতিগুলোর পক্ষে এখন টিকে থাকাই কঠিন হয়ে এসেছে। এল ইউনির্ভাসাল সংবাদপত্রের সংবাদ অনুসারে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে রা স্যাংঙ্কচুয়ারিও পিয়েড্রা হেরাডা [স্প্যানিশ ভাষায়] নামের জাতীয় সংরক্ষিত এক এলাকায় ৩০ শতাংশ প্রজাপতি মারা যায়। সেই অঞ্চলে তৈরি হওয়া এক প্রবল শীতে এ সব প্রজাপতি মারা যায়।

তবে এখনো প্রজাপতিদের এই অভিবাসন যাত্রা চালু রয়েছে। মেক্সিকোর অন্যতম এক উৎসবের নাম হচ্ছে ডিয়া ডে মুয়েরটস (মৃত্যুর দিন) । এই দিনটিকে মেক্সিকোর বাসিন্দারা তাদের মৃত প্রিয় মানুষদের স্মরণ করে। এটি স্থানীয় আদিবাসীদের এক সংস্কৃতি। মাজাহুয়া জনগোষ্ঠী এই উৎসব পালন করে। তারা বিশ্বাস করে প্রতিবছর অক্টোবরে আসা মনার্ক প্রজাপতি তাদের জনগোষ্ঠীর মৃত মানুষের আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে। একই সাথে তারা বিশ্বাস করে এই সমস্ত প্রজাপতি ঈশ্বরের কাছ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য এক বাণী বয়ে আনে।

এটাকে আমার দেশে যাদুকরী এক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ ঐতিহ্যগতভাবে যে দিনটিকে মৃত্যুর দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই দিনে তারা এসে হাজির হয়। তাদের সাথে মৃত মানুষদের আত্মাও এসে হাজির হয়। এখন আপনারা বুঝতে পারছেন কেন আমি প্রকৃতির এই বিস্ময়কর ঘটনার প্রতি এত মুগ্ধ?

মেক্সিকোর আকাশে উড়ছে হাজার হাজার প্রজাপতি।

মেক্সিকোর আকাশে উড়ছে হাজার হাজার প্রজাপতি।
Saturday 13 November 2010 09:55 PM



একটুখানি উষ্নতার সন্ধানে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও মেক্সিকোতে জড় হয়েছে অসংখ্য প্রজাপ্রতি। মেক্সিকোর আকাশে উড়ছে এসব রঙ্গিন প্রজাপতি। এই বর্নিল দৃশ্য দেখার জন্য ভীড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতে। জানাযায়, কানাডা আর যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে এসব প্রজাপতি বাস করে। সাধারনত শীত মৌসুম শুরু হবার পর পর ই এই প্রজাপতিগুলো উষ্নতার সন্ধানে মেক্সিকোতে পাড়ি জমায়। এক প্রাণী বিজ্ঞানী বলেন যে, প্রজাপতিগুলো এখানে ৫ মাস থাকবে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে যখন শরৎকাল আসবে তখন প্রজাপতিগুলো আবার তাদের পুরানো বাসস্থানে ফিরে যাবে। ঘূর্নিঝড়ে বিদ্ধস্ত হয়েছিল মেক্সিকোর সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তাই এবার প্রজাপতিগুলো বনাঞ্চল সহ জড় হয়েছে উন্মুক্ত জায়াগায়। যা তাদের স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে, আসন্য বর্ষা মৌসুমে বনাঞ্চল আবার সবুজ শ্যামলীমায় ভরে উঠবে। প্রজাপতিগুলো বংশবিস্তার করে যথা সময়ে পাড়ি জমাবে তাদের স্থায়ী ঠিকানায়। স্থায়ী জনগন জানান তারা মুক্ত আকাশে উড়ন্ত প্রজাপতির দৃশ্য খুবই উপভোগ করছেন।