প্রজাপতির দেশেপ্রজাপতি আমরা সবাই দেখেছি। রং-বেরঙের ডানা মেলে ওরা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়। কোন ফুলের কেমন গন্ধ_সেটা ওদের চেয়ে ভালো আর কে জানে, বলো? প্রজাপতির ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই বলেই জানি। কিন্তু অনেক আগে তার আসল নাম 'বাটারফ্লাই' ছিল না, 'ফ্লাটারবাই' ছিল। এখন অবশ্য সবার কাছে সে বাটারফ্লাই নামেই পরিচিত। লিখেছেন আরিফ হাসান প্রজাপতির ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই কিভাবে হলো
আচ্ছা, প্রজাপতির ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই কেন, কিভাবে হলো সেটা কখনো ভেবে দেখেছ কেউ? প্রজাপতি হলো মাছি প্রজাতির এক ধরনের পতঙ্গ। এদের গায়ের রং মাখনের মতো। অনেকের বিশ্বাস, মাখন রঙের মাছি অর্থাৎ বাটার-কালারড-ফ্লাই থেকেই বাটারফ্লাই শব্দটির জন্ম। প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় 'বাটারফ্লাই' শব্দটিকে বলা হতো 'বাটারফ্লোয়েজ'। আবার প্রাচীন ডাচ ও জার্মান ভাষায় বলা হতো 'বাটারফ্লিয়েজ'। সব শব্দের অর্থ কিন্তু একই_বাটারফ্লাই। জার্মান ভাষায় বাটারফ্লাইয়ের আরেক নাম হলো 'মিলচদিয়েব'। এই শব্দটির ইংরেজি রূপ হলো 'মিল্ক-থিফ'। বাংলা করলে দাঁড়ায় দুধ-চোর! কি অদ্ভুত নাম, তাই না? এমন নামের আসল ব্যাপার কি জানো? বাটারমিল্ক বা ঘোলের গন্ধ প্রজাপতির খুব প্রিয়। কোথাও ঘোলের গন্ধ পেলে ওরা সেখানে দলবেঁধে ছুটে যায়। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক এলাকায় একসময় প্রজাপতির চাষ করা হতো! শোনা যায়, প্রজাপতির খামার করার এ পদ্ধতি পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে এখনো চালু আছে। সে যা হোক, গায়ের রং মাখনের মতো কিংবা বাটারমিল্কের প্রতি ভীষণ টান থাকার কারণেই প্রজাপতির ইংরেজি নাম হয়েছে 'বাটারফ্লাই'।
প্রজাপতির কত নাম
আমরা যে মাছি বা পতঙ্গকে প্রজাপতি নামে চিনি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার কিন্তু আরো অনেক নাম আছে। স্পেন ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে প্রজাপতিকে ডাকা হয় 'ম্যারিপোসাস' নামে। পর্তুগাল ও ব্রাজিলে ডাকা হয় 'বরবোলেটাস' নামে। ফ্রান্সে 'প্যাপিললনস', রাশিয়ায় 'ব্যাবোচকা', আমেরিকায় 'টিটারনিগ' ও নাইজেরিয়ায় ডাকা হয় 'ওলুকওলোমবুকা' নামে।
কে প্রজাপতি, কে মথ
দিনের আলো ওদের খুব একটা কাছে টানে না। কিন্তু রাতের রুপালি আলো ওদের মাতাল করে তোলে। বিপদ হতে পারে জেনেও ওরা সেই আলোর খুব কাছাকাছি যেতে চায়। রাত হলেই ঘরের দেয়ালে ওদের দেখা মেলে। অনেকেই বলে, ওরা প্রজাপতি। আবার কেউ বলে ওরা মথ বা দেয়ালি পোকা। ঘরের দেয়াল বা বেড়ার ওপর বসে বলেই ওদের এমন নাম। ভাবছো, দেখতে একই রকম হলেও ওদের নাম আলাদা কেন? তাহলে কী করে বুঝব এটা প্রজাপতি আর ওটা মথ?
আসলে প্রজাপতি ও মথ একই দলের সদস্য। ওদের এই দলে পরিবার আছে ৩৪টি। প্রতিটি পরিবারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলাদা।
মথ বা দেয়ালি পোকার গায়ের রং প্রজাপতির চেয়ে অনুজ্জ্বল এবং এরা রাতে চলাফেরা করে। কিন্তু এমন অনেক মথ বা দেয়ালি পোকা রয়েছে, যাদের ডানায় আছে হরেক রঙের বাহার এবং চলাফেরা করে দিনের আলোতেই! উরানিয়া, বার্নেটস ও টাইগার মথ এদের অন্যতম। আবার এটাও সত্য, বেশির ভাগ প্রজাপতি দিনের আলো পছন্দ করে। তবে গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় এমন অনেক প্রজাপতির খোঁজও পাওয়া গেছে, যারা দিনের আলো এবং বনের ছায়া ছায়া আঁধার দুই জায়গায়ই থাকতে পছন্দ করে!
কেমন গোলমেলে লাগছে সব কিছু, তাই না? প্রজাপতি ও মথ কোনোভাবেই আলাদা করা যাচ্ছে না। আসলে দুজনের আরো এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা দেখে চেনা যায় কে প্রজাপতি আর কে মথ। প্রজাপতির শুধু শুঁড়ের আগার দিকটা চিকন, কিন্তু মথের শুঁড় পুরোটাই চিকন। প্রজাপতি যখন কোনো কিছুর ওপর চুপচাপ বসে থাকে তখন তার ডানাগুলো পিঠের ওপর খাড়া হয়ে থাকে। আর মথ যদি কোনো কিছুর ওপর চুপচাপ বসে থাকে তাহলে তার ডানা দুই পাশে সমান হয়ে ছড়িয়ে থাকে। পেছনের ডানা দুটো সামনের ডানা দুটোর সঙ্গে জোড়া লেগে থাকে। অবশ্য এ তফাৎটা সব সময় খাটে না। কারণ স্কিপার নামের প্রজাপতিরা এ তফাৎটা হতে দেয় না। ওরা যখন কোনো কিছুর ওপর চুপচাপ বসে থাকে তখন ওদের ডানাও মথের ডানার মতো দুই পাশে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রজাপতি আর মথের বংশবৃদ্ধি করার কৌশলটা ভারি অদ্ভুত। অনেক পোকা আছে, যারা প্রজাপতির বাসায় এসে প্রজাপতির ডিম খেয়ে নিজের ডিম রেখে যায়। বোকা প্রজাপতি সেটা বুঝতে না পেরে নিজের ডিম মনে করেই তা দিয়ে যায়। অনেকটা কাকের বাসায় কোকিলের ডিম পেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। কাক যেমন নিজের ডিম মনে করে বোকার মতো কোকিলের ডিম পাহারা দেয়, মাতৃস্নেহে সেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।
নতুন প্রজাতির নাম ঠিক হয় যেভাবে
প্রাণিজগতে নতুন প্রজাতির কোনো প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেলে সেটি কোন প্রজাতির তা জানার জন্য তার একটি নমুনা পাঠাতে হয় খ্যাতনামা কোনো শ্রেণীকরণবিদ বা ট্যাক্সোনমিস্টের কাছে। প্রজাপতি ও মথের বেলায়ও একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। খুঁজে পাওয়া প্রজাপতি বা মথের ডানা, পা ও অ্যান্টেনা বা শুঁড়ের গঠন-কাঠামো পরীক্ষা করে শ্রেণীকরণবিদ খুব তাড়াতাড়ি নতুন প্রজাপতি বা মথ কোন প্রজাতির, তার পরিবার এবং উপ-পরিবার কি_সেটা বের করে ফেলেন। শুধু ডানার শিরা-উপশিরা পরীক্ষা করেও প্রজাতি নির্ণয় করা যায়। যদি দেখা যায়, নতুন পাওয়া প্রজাপতি বা মথের শিরা-উপশিরার গঠন একক ধরনের তাহলে সেটাকে নতুন প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায়, নতুন পাওয়া প্রজাপতি বা মথটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খুব পরিচিত কোনো প্রজাতির সঙ্গে অনেকটা মিলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সঠিক প্রজাতি নির্ণয় করার জন্য নমুনা অংশটির ব্যবচ্ছেদ করা হয় এবং পরিচিত প্রজাতিটির প্রজনন অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আবার মাইক্রোস্কোপিক বা আণুবীক্ষণিক পরীক্ষার মাধ্যমে ডানার গঠন এবং ডিএনএ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও প্রজাতি নির্ণয় করা যায়। যদি দেখা যায় প্রজাতিটি সত্যিই নতুন, তাহলে শ্রেণীকরণবিদ প্রজাপতি বা মথটির জন্য একটি লাতিন নাম ঠিক করে নতুন প্রজাতিটির বিশদ বিবরণ ও নামসহ খ্যাতনামা কোনো বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশের জন্য পাঠিয়ে দেন।
যেভাবেই প্রজাতি নির্ণয় করা হোক না কেন, নতুন প্রজাতিটির নাম কি হবে_সেটা ঠিক করা হয় কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন কোনো কোনো প্রজাতির নাম করা হয় গ্রিক দেবতাদের নামে, আবার যে জায়গায় নতুন প্রজাতিটি পাওয়া গেল সেই জায়গার নাম অনুসারেও নামকরণ করা হয়। কখনো কখনো বিখ্যাত কোনো শ্রেণীকরণবিদের নামেও নামকরণ করা হয়। নতুন প্রজাতিটির গায়ের বা ডানার রং অনুসারেও নামকরণ হয়ে থাকে। এমনকি নতুন প্রজাতিটি যে খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করে, সেই খাবারের নাম অনুসারেও নামকরণ করা হয়।
কত দিন বাঁচে প্রজাপতি ও মথ
প্রাণিজগতে সবচেয়ে কম আয়ু নিয়ে জন্মায় পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণী। কেউ দুই সপ্তাহ বাঁচে তো কেউ দুই বছর বাঁচে। আবহাওয়া ও খাদ্যের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে প্রজাপতির বেঁচে থাকার সময়টা। একটি পূর্ণবয়স্ক প্রজাপতি গড়ে দুই সপ্তাহ বাঁচলেও কোনো কোনো প্রজাতির প্রজাপতি, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার হেলিকোনিয়াস এরাটো, টাইগেটিস মারমেরিয়া এবং ইউরোপের গোনেপটেরিক্স আরহামনি নামের প্রজাপতি বাঁচে এক বছরের কিছু কম সময়। গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় একটি প্রজাপতির জীবনকাল হয় মাত্র তিন সপ্তাহের। আবার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে একটি প্রজাপতির এক থেকে দুই প্রজন্ম শেষ হয় মাত্র এক বছরের মধ্যে! অন্যদিকে মেরু অঞ্চলে কয়েক প্রজাতির প্রজাপতি আছে, যারা দুই বছর পর্যন্ত বাঁচে। সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকে যে মথটি, তার নাম গাইনিফোরা গ্রোয়েনলান্ডিকা। মথটি কানাডার মেরু অঞ্চলে বাস করে।
কত প্রজাতির প্রজাপতির বাস পৃথিবীতে
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া গেছে প্রায় ১৭ লাখ প্রজাতির প্রাণীর। তার মধ্যে প্রজাপতি ও মথের সংখ্যা দুই লাখ ৫৩ হাজার ৬৮০। অন্যদিকে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত 'বাটারফ্লাইজ অব মেক্সিকো অ্যান্ড ইউএসএ' নামের একটি বইয়ে বলা হয়েছে, প্রজাপতি ও মথের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার ৭৫০। আবার ২০০৭ সালে প্রকাশিত এড্রিয়ান হসকিন্সের লেখা 'ওয়ার্ল্ড বাটারফ্লাই সেনসাস' নামের বইয়ে প্রজাপতি ও মথের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৬৫৭। আসল কথা হলো, প্রজাপতি ও মথের মোট সংখ্যা কত, এটা সঠিক করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। কারণ এর মধ্যে অনেক প্রজাতি যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে তেমনি অনেক নতুন প্রজাতির খোঁজও পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সব মিলিয়ে প্রজাপতি ও মথের প্রজাতির সংখ্যা ২১ হাজারের বেশি হবে না।
গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় কেন বেশি দেখা যায়
কোন প্রাণী পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বেশি দেখা যাবে সেটা নির্ভর করে সেই প্রাণীটির জৈবিক অবস্থা এবং জলবায়ুর ওপর। যেমন পেরু নামের দেশটির কথাই ধরা যাক। পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে পেরুতে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পাওয়া যায়। কারণ এটা এমন একটি দেশ, যেখানে মরুভূমি যেমন আছে তেমনি আছে তৃণভূমি এবং মেঘ ও বৃষ্টিপ্রধান বনাঞ্চল। যে প্রজাতির জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও খাবার দরকার তার সবই পাওয়া যায় পেরুতে। শুধু পেরু নয়, এ ধরনের পরিবেশ যেসব অঞ্চলে বিদ্যমান সেসব এলাকায়ই প্রজাপতি বেশি পাওয়া যায়। বসবাসের জন্য এ ধরনের পরিবেশ না পেলে প্রজাপতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। অনেকে তাই বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রীষ্মপ্রধান ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাড়ি জমায়।
মেয়ে না পুরুষ_কেমন করে চেনা যায়
প্রজাপতিটি মেয়ে না পুরুষ_সেটা চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রং। প্রজাপতিটির রং যদি হয় নীল তাহলে ওটা পুরুষ। আর যদি বাদামি রঙের হয় তাহলে বুঝতে হবে ওটা মেয়ে প্রজাপতি। পুরুষ প্রজাপতির ডানা বেশি কৌণিক হয়। শরীরটা হয় লম্বা ও চিকন। এদের গায়ের রং বেশি উজ্জ্বল হয়। মেয়ে প্রজাপতি হয় ঠিক এর উল্টো। পুরুষ প্রজাপতি একটু ঘরকুনো টাইপের হয়। নিজের এলাকা ছেড়ে সাধারণত অন্য কোথাও খুব একটা যেতে চায় না। তবে নিজের এলাকায় অন্য প্রজাতির কোনো পুরুষ প্রজাপতিকে সে কখনোই ঢুকতে দেয় না। মেয়েদের স্বভাব পাড়া বেড়ানো। তবে এমনি এমনি নয়। খাবারের খোঁজে যেখানে যাওয়া দরকার সেখানেই যায়।
সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কোন প্রজাপতি
একটা-দুটো নয়, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এমন প্রজাপতি আছে অনেক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মনার্ক, টাইগার, লং টেইল্ড ব্লু ল্যাম্পিডিস এবং স্মল হোয়াইট পিয়েরিস র্যাপি। তবে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে প্রজাপতি, তার নাম পেইন্টেড লেডি ভ্যানেসা কারদুই। উত্তর আমেরিকার আলাস্কা থেকে মেক্সিকো এবং দক্ষিণের ক্যারিবিয়ান দ্বীপ থেকে ভেনিজুয়েলার সব জায়গায়ই এদের পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে এদের দেখা যেত ইউরোপ, এশিয়ার উষ্ণ এলাকা, আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, আরব এবং ভারত উপমহাদেশের শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বোর্নিও, সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও এদের দেখা পাওয়া যায়!
গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার প্রজাপতি ও মথ বড় হয় কেন
পোকামাকড় হলো শীতল রক্তের প্রাণী। শীতল আবহাওয়ায় ক্যাটারপিলার বা শুঁয়ো পোকা (প্রজাপতির আগের ধাপ) খুব ধীরে ধীরে বাড়ে। ফলে এরা ছোট থেকে মাঝারি আকারের এক বা দুই প্রজন্মের প্রজাপতি বা মথ জন্ম দিতে পারে। শীতপ্রধান এলাকার চেয়ে উষ্ণ এলাকায় বেঁচে থাকার জন্য বেশি খাবার পাওয়া যায়। ফলে এসব এলাকার শুঁয়ো পোকা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং এদের আকারও অনেক বড় হয়। এরা এক বছরে বেশ কয়েকটি প্রজন্মের জন্ম দিতে পারে।
শুঁয়ো পোকা কি ডিম পাড়ে
অনেক সময় শুঁয়ো পোকার চার পাশে ডিমের মতো কিছু দেখা যায়। এ থেকে মনে হয়, ওরা ডিম পাড়ে। আসলে ওগুলো ওদের ডিম নয়। দেখতে হলুদ রঙের ওই জিনিসগুলো হলো অ্যাপান্টিলেস গ্লোমেরাটাস নামের এক ধরনের ছোট্ট বোলতার কোকুন। এই বোলতার স্বভাব অনেকটা কাকের বাসায় কোকিলের ডিম পেড়ে আসার মতো। এরা শুঁয়ো পোকার শরীরে ডিম পেড়ে আসে। ডিম ফুটে বের হয় শিশু বোলতা বা কোকুন। আশপাশে খাবার না পেয়ে ওরা শুঁয়ো পোকার মাংসল অংশ খেতে শুরু করে। বাচ্চাগুলো আরো বড় হলে শুঁয়ো পোকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ খেয়ে মেরেই ফেলে! তারপর শুঁয়ো পোকার চামড়া ভেদ করে ওরা বাইরে বেরিয়ে আসে। বেচারা শুঁয়ো পোকা ওখানেই শেষ। বাইরে বেরিয়ে আসা কোকুনের সংখ্যা হয় ২০ থেকে ৮০। হলুদ রঙের এই কোকুন দেখতে খুব ছোট। পরের বসন্তে এই কোকুন থেকেই জন্ম নেয় নতুন বোলতা। প্রায় ৮০ ভাগ শুঁয়ো পোকা এভাবেই বোলতাদের কাছে জীবন দেয়।
সবচেয়ে বেশি প্রজাপতি দেখা যায় কোন দেশে
আগেই জেনেছো, পরিবেশের কারণেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রজাপতি দেখা যায় পেরুতে। এখানে প্রায় তিন হাজার ৭০০ প্রজাতির প্রজাপতি দেখা যায়! যে প্রজাপতিটিকে অন্যদের চেয়ে বেশি দেখা যায় তার নাম হলো পাকিতজা। পেরুর পরেই অন্য যেসব দেশে বেশি প্রজাপতি দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর। এসব দেশের প্রতিটিতে প্রায় তিন হাজার ২০০ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা পাওয়া যায়।
প্রজাপতি মাথা নিচু করে বিশ্রাম নেয় কেন
প্রজাপতি মাথা নিচু করে বিশ্রাম নেওয়ার বেশ কয়েকটি যুক্তি আছে। ওদের শত্রুর কোনো অভাব নেই। দুরন্ত বালক থেকে শুরু করে অনেক পোকামাকড়ই ওদের তাড়া করে ফেরে। ফলে ওরা কোথাও বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না। যেকোনো সময় বিমানের বেগে উড়ে পালাতে হতে পারে জেনেই ওরা কোনো কিছুর ওপর বসার সময় মাথা নিচু করে ডানা পিঠের ওপর খাড়া করে রাখে। প্রজাপতি বেশির ভাগ সময় গাছের গুঁড়ির ওপর বসে। এ অবস্থায় ডানা দুটো পিঠের ওপর খাড়া করে রেখে মাথা নিচু করে রাখার কারণে নিচের দিকে কী হচ্ছে তার সব খবর রাখা যায়। পুরুষ প্রজাপতি বসার এই পজিশনটা ব্যবহার করে মেয়ে প্রজাপতি বনের ঠিক কোন জায়গায় আছে সেটা দেখার জন্য। তা ছাড়া এই ভঙ্গিতে বসার কারণে প্রজাপতির ডানা খুব সহজেই সূর্যের আলো শোষণ করে প্রজাপতিকে উষ্ণ হতে সাহায্য করে।
বৃষ্টির সময় কোথায় যায় প্রজাপতি
রোদ ঝলমল দিনে এখানে-ওখানে অনেক প্রজাপতির দেখা মিললেও বৃষ্টির সময় ওদের কোথাও দেখা যায় না। আচ্ছা, ওরা এ সময় কোথায় যায় বলতে পারো? কোথাও যায় না ওরা! বৃষ্টি আসার আগেই আশপাশের কোনো গাছের পাতার নিচে আশ্রয় নেয়! ভেজা ভেজা বাতাস কিংবা ঝড়ো বাতাস দেখলেই ওরা বুঝতে পারে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। তার আগেই ওরা গাছের পাতার নিচে আশ্রয় নেয়। বৃষ্টির সময় সব প্রজাপতিই যে গাছের পাতার নিচে আশ্রয় নেয়, তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ অন্য প্রাণীর গর্তে গিয়েও আশ্রয় নেয়। যেমন পিকক নামের প্রজাপতি বৃষ্টি আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই খরগোশের গর্তে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। আবার কেউ আছে গাছের খোড়লে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ ধরনের একটি প্রজাপতি হলো কম্মাস। অরেঞ্জ টিপ নামের প্রজাপতি লুকায় কোনো ফুলের পাপড়ির ভেতরে গিয়ে। ব্লুজ, ব্রাউন ও স্কিপার নামের প্রজাপতিরা লুকায় ঘন ঘাসের ভেতরে।
যাযাবর প্রজাপতি
প্রজাপতি খুবই দুর্বল আর ক্ষণজীবী প্রাণী। তার পরও যাযাবর পাখির মতো দূর থেকে দূরে উড়ে বেড়ানো এদের কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। অবশ্য যাযাবর পাখির মতো তারা যে জায়গা থেকে উড়ে আসে সেখানে আর ফিরে যেতে পারে না। নতুন জায়গায় এবং কখনো কখনো পথেই তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু কথা হলো, কেন তারা মাঝেমধ্যেই যাযাবর হতে চায়? আসলে জন্ম থেকে এটাই ওদের ধর্ম। বেঁচে থাকার জন্য সব সময় একটু ভালো পরিবেশের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। যেখানে পছন্দ হয় সেখানেই ঘাঁটি গাড়ে। সবাই মিলে গড়ে তোলে বিশাল প্রজাপতি কলোনি। প্রাকৃতিক নানা বাধা যেমন বিশাল সাগর, মরুভূমি কিংবা সুউচ্চ পাহাড় চূড়ার কারণে ওদের অনেকেই দূরে কোথাও পাড়ি জমাতে পারে না। কারো কারো কাছে এসব কোনো বাধাই নয়। তারা ঠিকই সব বাধা ডিঙিয়ে নতুন জায়গায় গিয়ে বসতি গড়ে। যাযাবর প্রজাপতির মধ্যে বিখ্যাত হলো মনার্ক প্রজাপতি। প্রতিবছর কানাডা থেকে মেক্সিকোতে পাড়ি দেওয়া এদের কাছে জলের মতো সহজ।
প্রজাপতির জন্ম কবে
পোকামাকড়ের ফসিল দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, আজ থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে পোকামাকড়ের জন্ম। ধরে নেওয়া হয় লেপিডোপটেরা বর্গের প্রাণীদের (প্রজাপতি, মথ) জন্ম ১৪০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে। ঠিক একই সময় পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল প্রথম সপুষ্পক উদ্ভিদের।
কত উঁচুতে উড়তে পারে প্রজাপতি
সবচেয়ে বেশি উঁচুতে উড়তে পারা প্রজাপতির নাম স্যাটাইরিন প্যারালেসা নেপালিকা। এটার সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৮৩ সালে। নেপালের 'সেই ফোকসুন্দ ন্যাশনাল পার্ক'-এর ১৪ হাজার ৮০০ ফুট ওপরে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল এ প্রজাপতিটির। আনকমপাহগ্রে ফ্রিটিলারি বোলোরিয়া ইমপ্রোবা অ্যাক্রোনেমা নামের আরেকটি প্রজাপতি জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে ভূমি থেকে প্রায় ১৪ হাজার ২০০ ফুট ওপরে। আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যের সান জুয়ান পর্বতের চূড়ায় ওদের বসবাস। ওড়াউড়িতে পেইন্টেড লেডি ভানেসা কারদুই নামের প্রজাপতিও কম যায় না। যেখানেই থাকুক সব সময় প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপর দিয়ে চলাফেরা করে!
প্রজাপতির রঙিন ডানার কাজ কী
রঙিন প্রজাপতি দেখলে অনেকেই তার পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু তাকে মুঠোবন্দি করা অত সহজ নয়, যত সহজ এক রঙা প্রজাপতি ধরা। বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারো। আচ্ছা, এর রহস্য কী, বলতে পারো? বিজ্ঞানীদের মতে, প্রজাপতির রঙিন ডানা চোখ হিসেবে কাজ করে! কেউ যখন তাকে ধরতে যায়, সে তা দেখতে পেয়েই উড়ে যায়। এ কারণেই সহজে ওদের নাগালে পাওয়া যায় না। প্রজাপতির ডানায় হরেক রঙের ছটা দেখে অনেক সময় পাখি ও অন্যান্য প্রাণী ভয় পায়। ভয়ে ওরা রঙিন প্রজাপতিকে ভুলেও ঘাঁটাতে চেষ্টা করে না। এক ধরনের প্রজাপতি আছে, যাদের ডানায় আয়নার মতো ছোট-বড় অসংখ্য চোখ থাকে। না, এই চোখ দিয়ে প্রজাপতি কিছু দেখতে পায় না। তবে ওরা যখন বুঝতে পারে কোনো প্রাণী তাদের আক্রমণ করতে আসছে, তখন ডানা মেলে আয়নার মতো রঙিন চোখে ভয় দেখায়। বেশির ভাগ সময় ওরা এভাবেই শত্রুর কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করে থাকে।
No comments:
Post a Comment