Tuesday, January 4, 2011

প্রজাপতির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রজাপতির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার, ১৮ অক্টোবর ২০১০
গাছপালায় ঘেরা দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে আগামী মাসের শেষদিকে ‘প্রজাপতি মেলা’ আয়োজন করা হবে। পরাগায়ন-সহায়ক এ দৃষ্টিনন্দন প্রজাতির বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘প্রজাপতি ঘর’ তৈরির মাধ্যমে পতঙ্গটির বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রকৃতির অলঙ্কার হিসেবে পরিচিত প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। পরাগায়নে যাতে সমস্যা না হয়, সেই লক্ষ্যে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাদে ও এর সামনের বাগানে পরিকল্পিভাবে তৈরি করা হয়েছে ‘প্রজাপতি ঘর’। এখানে কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে অবমুক্ত করা হচ্ছে প্রজাপতি। তাই সবুজ নিসর্গে ভরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানগুলোতে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতির দুরন্ত ওড়াউড়ি চোখে পড়ে।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগেরই সহযোগী অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন ১৪ বছর ধরে নিরলসভাবে প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করছেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম এ গবেষণার কাজ শুরু হয় বলে জানান তিনি। প্রজাপতির একটি খামার গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে তার।
অধ্যাপক মনোয়ার বলেন, বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার অধীনে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্লেইন টাইগার প্রজাতির প্রায় তিনশ’ প্রজাপতি সম্প্রতি ক্যাম্পাসে অবমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি এক তথ্যে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে ও তার একক গবেষণায় এ পর্যন্ত প্রজাপতির মোট ১০২টি প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে।
অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রজাপতির প্রায় ২০০টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্লেইন টাইগার, কমন ক্রো, প্লাম জুডি, ডিঙ্গি বুশব্রাউন, কমন ডাফার, এপফ্লাই, পি ব্লু, টাইনি গ্রাস ব্লু, ওক ব্লু, কমন সেইলর, কমন রোজ, ব্লু মরমন, স্ট্রাইপড অ্যালবাট্রস, মটিলড ইমিগ্রান্ট, কমন গ্রাস ইয়েলো, স্ট্রাইপড পাইরট, মানকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি।
তিনি জানান, এসবের মধ্যে স্ট্রাইপড পাইরট, মানকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি নামের চারটি প্রজাতি অতিসম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে জাবি ক্যাম্পাসে প্রজাপতির নতুন নতুন প্রজাতির সন্ধান মিললেও দেশে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় প্রকৃতির অপরূপ অলঙ্কার এই প্রজাপতিকুলের অস্তিত্বও এখন হুমকির মুখে।
বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামী দিনগুলোতে প্রজাপতির একটি খামার গড়ে তোলার আশাবাদ জানিয়ে এই গবেষক বলেন, প্রজাপতির প্রধান কাজ পরাগায়নে সহায়তা করা। এর মাধ্যমেই উদ্ভিদ বংশবিস্তারে সক্ষম হয়।
প্রজাপতি সংরক্ষণে এখনই উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রজাপতির সবক’টি প্রজাতির তালিকা তৈরির পাশাপাশি এদের সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
প্রজাপতির নান্দনিক ও বাণিজ্যিক ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রজাপতি আমদানি ও রফতানি করে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা সম্ভব। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড প্রজাপতি রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণার পর জানিয়েছেন, সোলার প্ল্যান্টে প্রজাপতির পাখার স্কেল ব্যবহার করে দশ গুণ বেশি সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশও এ প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘প্রজাপতি মেলা’ করা হবে বলেও জানান অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন।
প্রজাপতি প্রতিপালন ও এর নিরাপদ বংশবৃদ্ধির জন্য প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দুটি ‘প্রজাপতি ঘর’ তৈরির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কৃত্রিম উপায়ে প্রজাপতির খাবারসহ (পর্যাপ্ত ফুল ও গাছ) অনুকূল পরিবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান, এখানে প্রজাপতির কৃত্রিম উপায়ে বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে পূর্ণাঙ্গতা প্রাপ্তির পর উন্মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে প্রজাপতিকুল রক্ষায় সামান্য হলেও অবদান রাখা হচ্ছে।
Source: Daily Amardesh

No comments:

Post a Comment