Wednesday, January 5, 2011

প্রজাপতির রং

প্রজাপতির রং মৃত্যুঞ্জয় রায় এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রজাপতি যেন উড়ন্ত ফুল। বাহারি সব ফুলের মতোই ওদের রং-বেরঙের পাখা। রঙিন পাখা মেলে ওরা হাওয়ায় ভাসতে থাকে, ফুলে বসে। প্রজাপতিরা এমন রঙিন পাখা কোথায় পেল বলো তো? ওদের পাখা এ যুগে শুধু তোমাদেরই মুগ্ধ করে না, আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগেও মিসরের লোকদের মুগ্ধ করত। তাই তো তাদের আদি হরফের আঁকিবুঁকিতে সেই প্রাচীন যুগেও তারা প্রজাপতির ছবি আঁকত, সংকেত হিসেবে প্রজাপতি দিয়েই তারা বুঝে নিত অনেক কিছু। সেকালে প্রজাপতির ওই রঙিন পাখার রহস্য তারা বুঝত না। এ যুগের বিজ্ঞানীরা কিন্তু ঠিকই সে রহস্য খুঁজে পেয়েছেন, বের করেছেন প্রজাপতির রংরহস্য।
গোঁফ দেখে যেমন শিকারি বিড়াল চেনা যায়, তেমনি রং দিয়েই চেনা যায় প্রজাপতি। একেক প্রজাপতির একেক রং। রং মানে পাখায় পাখায় নানা রঙের নকশা। এক জাতের সঙ্গে অন্য জাতের প্রজাপতির রং ও নকশা কখনোই মেলে না, এমনকি একই প্রজাপতির পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতির রঙের মধ্যেও কিছুটা পার্থক্য থাকে। তা না হলে তো স্ত্রী ও পুরুষ চেনাই মুশকিল হয়ে যেত।
তবে প্রজাপতিদের রঙের দরকার আছে। প্রজাপতিদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় ওই রং দিয়েই। রং দিয়েই একই প্রজাতির প্রজাপতিরা একে অপরকে চিনতে পারে। এমনকি কোনো কোনো প্রজাপতি রং দিয়েই শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে। কিন্তু প্রজাপতিদের পাখার দুই পাশে কি একই রং? কখনো কোনো প্রজাপতি ধরে সেটা খেয়াল করে দেখেছ? যদি খেয়াল করো, দেখবে পাখার ওপরের পাখা ও নিচের পাশ কখনো একই রঙের হয় না। ওপরের পাশ হয় চকচকে এবং নিচের পাশ হয় ধূসর বা মলিন।
সব প্রজাপতিরই চারটি পাখা থাকে; কিন্তু তোমরা অনেকেই ছবি আঁকার সময় আঁকো দুটি পাখা। না না, তোমাদের একটুও দোষ নেই_দোষ তো ওই প্রজাপতিগুলোর। ওরা তো ওদের পেছনের পাতলা পাখা জোড়া সামনেরগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে রাখে। রঙিন পাখা জোড়ায় তালি বাজিয়ে ওরা মনের আনন্দে উড়ে উড়ে সূর্য আর ফুলের সঙ্গে মিতালি গড়ে খেলা করে। ফুল থেকে ওরা মধু খায়, পানি খায় আর রোদ থেকে পায় চলার প্রেরণা ও সৌন্দর্য।
মাছের গায়ে যেমন আঁশ থাকে, প্রজাপতির পাখায়ও অমন শত-সহস্র আঁশ থাকে। তবে সেগুলো মাছের মতো শক্ত আর বড় নয়, রেশমের মতো কোমল আর ক্ষুদ্র। খালি চোখে সেসব আঁশের আকার-আকৃতি সহজে বোঝা যায় না। ইংরেজিতে এসব আঁশকে বলে স্কেল। প্রজাপতির রংরহস্যের মূলে রয়েছে এসব ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র আঁশ। এসব আঁশ মেলানিন নামে এক ধরনের পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ দ্বারা রঞ্জিত থাকায় তা পাখায় কালো ও বাদামি রং সৃষ্টি করে। কিন্তু লাল, নীল, সবুজ, হলুদ_এসব রং আসে কোথা থেকে? এগুলো কিন্তু কোনো পিগমেন্ট দিয়ে হয় না। আঁশের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশই এসব রঙের সৃষ্টি করে থাকে। আঁশের মধ্যে এক ধরনের আলোক স্ফটিক বা ফোটোনিক ক্রিস্টাল প্রকৃতি আছে। তাই সূর্যের আলো আঁশে পড়ামাত্রই আঁশের মাইক্রোস্ট্রাকচারাল প্যাটার্নের অর্থাৎ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে আলোকরশ্মির এক বর্ণিল বিচ্ছুরণ ঘটে। আর তার প্রভাবেই আমরা নানা প্রজাপতিকে দেখি নানা রঙে। এসব আঁশ এতো সূক্ষ্ম, হালকা ও আলগা যে তুমি প্রজাপতির পাখায় আঙুল ছোঁয়ালেই সেগুলো গুঁড়োর মতো তোমার আঙুলে লেগে যাবে। আর তাতে নষ্ট হয়ে যাবে প্রজাপতির রং ও সৌন্দর্য। হয়তো ওকে আর চেনাই যাবে না।
Source: Daily Kalerkantho

No comments:

Post a Comment