Tuesday, January 4, 2011

প্রেসক্লাবে রঙিন প্রজাপতির ওড়াউড়ি

প্রেসক্লাবে রঙিন প্রজাপতির ওড়াউড়ি

জিয়াউদ্দিন সাইমুম, ২২ নভেম্বর ২০১০
নিত্যদিনের নাগরিক কোলাহলের ভিড়ে হঠাত্ রঙিন ডানার প্রজাপতির দুরন্ত ওড়াউড়ি দেখলে সবার মন জুড়ায়। আর হেমন্তের এই মিঠে-কড়া দিনে রাজধানীর ব্যস্ততম তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সবুজ চত্বরে এখন প্রকৃতির এই অনবদ্য সৃষ্টির যেন বাহারি মেলা বসেছে। সাংবাদিকদের ‘সেকেন্ড হোম’ নামে পরিচিত এই ক্লাবের বাগানের ফুলে ফুলে নানা রংয়ের প্রজাপতির ভিড় এটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, শীতের শুরুতে দিবাচর এই প্রাণীটির প্রজননের সময় এসে গেছে। প্রকৃতির অলঙ্কার এই ক্ষুদে পতঙ্গটির রঙিন ডানা মানুষকে যুগে যুগে কাছে টেনেছে। এটির বাহারি উড়ে চলা দেখে কবি চার্লস ডিকেন্স বড় আফসোস করে বলেছিলেন, ‘আমি স্বাধীন হতে চাই। আর প্রজাপতি জন্ম থেকেই স্বাধীন।’ অথচ খুব বেশি দিন বাঁচে না এ পতঙ্গ। প্রজাতিভেদে এর আয়ু পাঁচদিন থেকে ১০ মাস। দুটি অ্যান্টেনা, দুটি জটিল চোখ আর একটি নলাকার মুখ নিয়েই এদের অনিশ্চিত পথচলা।
বাংলাপিডিয়া মতে, আমাদের দেশে ১২৪ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত হয়েছে। এরা ঘণ্টায় ১২ মাইল থেকে ২৫ মাইল বেগে উড়তে পারে। বেশি শীতে এরা টিকতে পারে না বলে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে প্রজাপতি নেই। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রজাপতি ঘুমায় না। বিশ্রাম নেয় মাত্র। এরা কিছু পাখির মতো পরিযায়ীও বটে।
তবে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন দাবি করেছেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রজাপতির প্রায় ২০০টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— প্লেইন টাইগার, কমন ক্রো, প্লাম জুডি, ডিঙ্গি বুশব্রাউন, কমন ডাফার, এপফ্লাই, পি ব্লু, টাইনি গ্রাস ব্লু, ওক ব্লু, কমন সেইলর, কমন রোজ, ব্লু মরমন, স্ট্রাইপড অ্যালব্যাট্রস, মটিলড ইমিগ্রান্ট, কমন গ্রাস ইয়েলো, স্ট্রাইপড পাইরট, মাংকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি।
তিনি জানান, এসবের মধ্যে স্ট্রাইপড পাইরট, মাংকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি নামের চারটি প্রজাতি অতি সম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে।
দিবাচর এ পতঙ্গটি সাধারণত মধু খেয়ে বাঁচে। তবে খাদ্য তালিকায় রয়েছে ফুলের রেণু, গাছের রস, পচা ফল, গোবর, পচনশীল মাংস, বালু অথবা ময়লায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা খনিজ পদার্থ। পরিবেশ রক্ষায় এ পতঙ্গটির অবদান রয়েছে। এরা ফুলের পরাগায়ণে ভূমিকা রাখে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে প্রজাপতির আলোক সংবেদী রঙিন পাখা নিয়েই প্রকৃতিপ্রেমীরা মেতে থাকেন।
সম্ভবত এ কারণে বলা হয়ে থাকে প্রজাপতি মানেই লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, বেগুনিসহ বহু বর্ণের নয়নাভিরাম ছটা— যার সৌন্দর্য শিল্পীর সৃষ্টিকেও নাকি হার মানায়। আর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে মানবিক এ অনুভূতিটি এখন নতুন গতি পাচ্ছে।
এটা ঠিক যে, প্রকৃতির দৃষ্টিনন্দন প্রাণী প্রজাপতির সৌন্দর্য আর পাখার বর্ণিল রংয়ের বাহার মানুষকে মুগ্ধ করা ছাড়াও পরিবেশের জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য রাখতে সহায়তা দেয়। আবার প্রাকৃতিক জৈবসম্পদ সংরক্ষণেও এটির গুরুত্ব রয়েছে। অথচ এই সুন্দর প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে এর সংখ্যা, বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় সংকুচিত হচ্ছে এর বিচরণ ক্ষেত্র।
পৃথিবীর অনেক দেশেই বর্তমানে প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সেসব পার্কে প্রজাপতির জীবনযাত্রার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে জীবন্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে অসংখ্য প্রজাতির প্রজাপতি। জাতীয় প্রেস ক্লাব এ জাতীয় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ না নিলেও নাগরিক যন্ত্রণার ভিড়ে ক্লাবটির সবুজ চত্বরে প্রজাপতির দুরন্ত ওড়াউড়ি কলমজীবীদের মনে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। নানা কারণে প্রেস ক্লাবে আসা দর্শনার্থীরাও প্রজাপতির বাহারি পাখা থেকে চোখ ফেরাতে পারছেন না।
প্রজাপতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ পুরো বিশ্ব। পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ এখন রীতিমতো প্রজাপতি রফতানি করছে। তবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রঙিন পাখার নজরকাড়া ওড়াউড়ি এটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রজাপতি নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।
Source: Daily Amardesh

No comments:

Post a Comment